আবদুর রাজ্জাক।।
কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন পেঁচারদ্বীপে কিংশুক ফার্মস লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্যারাবন নিধন, পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন ও জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মৎস্য খামার তৈরির সত্যতা পেয়েছে তদন্ত দল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বন আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্তদলের প্রধান রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা। এ সময় সাথে ছিলেন, বন বিভাগের কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমির রঞ্জন দে, খুনিয়াপালং ইউনিয় ভুমি অফিসার আবছার কামাল, স্থানিয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ। উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ বিকেলে কক্সবাজার বন আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ মেরিনড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পাশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতের প্যারাবন নিধন করে কিংশুক ফার্মস লিমিটেডের রিসোর্ট ও মৎস্য খামার তৈরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কক্সবাজারের প্যাঁচারদ্বীপে প্যারাবন দখল করে চলছে রিসোর্ট বানানোর কাজ’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর প্যারাবন দখলের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। প্যারাবন দখল করে কিংশুকের রিসোর্ট তৈরির ঘটনা স্বতন্ত্রভাবে সরেজমিন তদন্ত করে আগামী ৩ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষককে নির্দেশ দেন আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের পাশাপাশি প্যারাবনের (ঘটনাস্থল) মালিকানা নির্ধারণ, ঘটনাস্থলের খতিয়ান, মৌজা, দাগ নম্বর ও চৌহদ্দী নির্ধারণ, অপরাধের আলামত জব্দ করা, সংশ্লিষ্ট অপরাধ কে বা কারা সংঘটিত করেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনের জবানবন্দি ও সাংবাদিকদের সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এসব ঘটনায় আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।
আদালতের আরজিতে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনের ওই প্রতিবেদন আদালতের গোচরীভূত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ এলাকার ভরাখালে সৃজিত প্যারাবন দখল করে তাতে তৈরি হয়েছে ৭০০-৮০০ ফুট লম্বা সীমানা দেয়াল। এক্সকাভেটর দিয়ে সেখানে মাটির বাঁধ ও যান চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। প্যারাবনের বিরানভূমির কিছু অংশ ভরাটের পর সেখানে তৈরি হবে রিসোর্ট। আর কিছু অংশে হবে মৎস্য খামার। এ বিষয়ে বন বিভাগ বা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। যেখানে এসব কাজ চলছে, সেখানে ‘কিংশুক ফার্মস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। তবে সেখানে মালিকের নাম ও যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বর দেওয়া নেই।
প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ১৫-২০ দিন ধরে প্যারাবন নিধন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং দুই পাশে ইটের দেয়াল তোলা হলেও উপজেলা প্রশাসনের কেউ সেখানে যাননি। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে আদালতের মনে হয়েছে, ঘটনাস্থলের (প্যারাবন) মালিকানা –সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপিত হলে উপজেলা প্রশাসন রামু এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ উভয়ই এড়িয়ে যায়। বনভূমি কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্যারাবন নিধনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্যারাবন নিধন করলে তা বন আইন-১৯২৭এর অধীনে বন অপরাধ ও ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হয়।
পরিদর্শন শেষে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, কিংশুক ফার্মস লিমিটেড এর পক্ষে এখানে প্যারাবন নিধন করা হয়েছে। পুকুর খনন করে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগকে সাথে নিয়ে জরিপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর পর বন আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে। তিনি আরোও বলেন, এর পুর্বে মার্চ মাসে প্যারাবন নিধনের বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ পেয়ে আরো দুইবার পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে মার্চ মাসে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছি। বন আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সে তদন্তের জন্যই ৩য় বার এখানে আসা।
বন বিভাগের কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমির রঞ্জন দে বলেন, কিংশুক ফার্মস লিমিটেড বেশ কিছু প্যারাবন নিধন করেছে, প্যারাবন কেটে রাস্তা নির্মান করেছে, পুকুর খনন করে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে বন আদালতের নির্দেশনায় পরিদর্শন করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
Leave a Reply