মো: সোহেল মিয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইনী সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন,গাজীপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে এক মহতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, যা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে 'ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিতরণ, বৃক্ষরোপণ ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা'র শীর্ষক এই জনকল্যাণমূলক উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি মঙ্গলবার ৮-০৭-২০২৫ ইং তারিখ বিকেল ৩টায় গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন গাজীপুরার খরতৈল, সাতাইশ রোডস্থ জম জম টাওয়ারের (২য় তলায়) অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মোঃ বাবলু মিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তফা জেমস্। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এস এম মেহেদী হাসান এবং পরিচালক ব্যবস্থাপনা মোঃ সোহেল মিয়া। এছাড়া, গাজীপুর মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ দুলাল মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মজিদুল হক ও মোঃ ফরহাদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ প্রবাহ ইসলাম সুমন, এবং দপ্তর সম্পাদক মোঃ আলিম হাওলাদারসহ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রায় এক হাজার খেটে খাওয়া সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিতরণকৃত সামগ্রীর মধ্যে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি সয়াবিন তেল এবং ১ কেজি কাপড় কাচার পাউডার। এই খাদ্যসামগ্রীগুলো দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এক বিশাল স্বস্তি এনে দিয়েছে। একই সাথে, পরিবেশ সুরক্ষায় অংশীদারিত্বের জন্য একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং সমাজের অবহেলিত মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার লক্ষে শুভ উদ্বোধন করা হয়। এই বহুমুখী উদ্যোগটি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান মো: গোলাম মোস্তফা জেম্স তাদের ভবিষ্যৎ মানবিক কার্যক্রমের একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। তার এই ঘোষণা সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আসক ফাউন্ডেশনের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং দেশব্যাপী মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
মো: গোলাম মোস্তফা জেম্স জানান, আসক ফাউন্ডেশন সপ্তাহে একবার করে প্রতি মাসে মোট চারবার ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "সকলের সমর্থন থাকলে এই কার্যক্রম আমরা নিয়মিত চালিয়ে যেতে পারবো।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলো নিয়মিতভাবে সুলভ মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নিত্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারবে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার চাপ কমাতে এবং আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই মানবিক কার্যক্রমের পরিধি শুধু গাজীপুর মহানগরীতে সীমাবদ্ধ থাকছে না। চেয়ারম্যান জেম্স দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, "এ কার্যক্রম মাত্র গাজীপুর মহানগরে শুরু করলাম, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় চালু করবো।" এটি আসক ফাউন্ডেশনের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সারা দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়াও, সমাজের অবহেলিত মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতি মাসে একবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষজন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা পাবে, যা তাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পরিবেশ সুরক্ষায় নিজেদের দায়িত্ব পালনেও আসক ফাউন্ডেশন পিছিয়ে নেই। মো: গোলাম মোস্তফা জেম্স উল্লেখ করেন যে, তারা একটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছেন, যা পুরো মাস জুড়েই চলমান থাকবে। এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগটি শুধুমাত্র সবুজায়ন নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা।
আসক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের এই ঘোষণা তাদের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের প্রতি গভীর সংকল্প এবং একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে প্রতিফলিত করে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহযোগিতা ও সমর্থন পেলে এই মহতী উদ্যোগগুলো আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে এবং অসংখ্য মানুষের জীবনে ইতিবাচক ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এস এম মেহেদী হাসান বলেন, "আসক ফাউন্ডেশন শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি বিশ্বাস, একটি প্রতিজ্ঞা। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। গাজীপুরে যে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিতরণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তা কেবল একটি সূচনা মাত্র। আমরা এই মানবিক কাজগুলোকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চাই, যাতে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আমাদের সহায়তার সুফল ভোগ করতে পারে।" তিনি সমাজের বিত্তবান ও সুহৃদয়বান ব্যক্তিদের আসক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান, কারণ তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই উদ্যোগগুলোকে সফল করতে পারে।
পরিচালক ব্যবস্থাপনা মোঃ সোহেল মিয়া তার বক্তব্যে যোগ করেন, "আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলতে চাই যে, আসক ফাউন্ডেশনের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে। আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার: কোনো মানুষ যেন ক্ষুধা, চিকিৎসা বা পরিবেশগত অসচেতনতার কারণে কষ্ট না পায়। ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিতরণের মাধ্যমে আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছি, এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা একটি সবুজ ও সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতা ও ভালোবাসাই আমাদের পথচলার মূল শক্তি।" তিনি দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করেন যে, আসক ফাউন্ডেশন তার প্রতিশ্রুতি পূরণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।
বিশেষ অতিথিদের এই বক্তব্য আসক ফাউন্ডেশনের মানবিক লক্ষ্য এবং তা বাস্তবায়নে তাদের দৃঢ় সংকল্পকে তুলে ধরে। তাদের কথায় ফুটে উঠেছে সমাজের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং বঞ্চিত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা।
আসক ফাউন্ডেশন (গভ: রেজি: নং ওঠ-০২/২০২৩) । সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার রক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। তাদের এই ধরনের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনছে। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এই মহতী উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আশা করা হচ্ছে, আসক ফাউন্ডেশনের এই প্রচেষ্টা অন্যান্য সংগঠনকেও জনসেবামূলক কাজে উৎসাহিত করবে।