ইফতেখারুল ইসলাম জুয়েলঃ
বিনা নোটিশে ৬ দশক ধরে বসবাসকৃত ৩ পরিবারের বসতভিটার স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে রামুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন ঈদগড়ের ২নং ওয়ার্ডবাসী। মানববন্ধনে রামুর এসিল্যান্ডের অনিয়মের অভিযোগ তুলে তার অপসারণ চান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসী।২৮ ফ্রেবুয়ারী, বৃহস্পতিবার বিকাল ২টায় মামুন মিয়া বাড়ির সামনে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন সর্বস্তরের জনসাধারণ।
জানা যায়, ২৭ ফ্রেবুয়ারী, বুধবার দুপুরে রামু উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন স্কেবেটর দিয়ে মামুন মিয়ার বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। বাড়িতে থাকা মালামালও বের করতে দেওয়া হয়নি বলে জানান তারা। কক্সবাজার রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড হাসনাকাটা কোনার পাড়ার বাসিন্দা মামুন মিয়াসহ ৩টি অসহায় পরিবার পথে বসেছেন। মামুন মিয়া কোনার পাড়ার মৃত শফিউল করিমের ছেলে।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, মামুন মিয়ার ও তার ভাইয়েরা ৬০ বছর ধরে এই বসত ভিটায় বসবাস করে আসছেন। কিন্ত হঠাৎ আজকে কোর্টের উচ্ছেদ মামলা দেখিয়ে প্রশাসনের যোগসাজশে এই পরিবারের বসতভিটা গুড়িয়ে দেন। ক্ষতিগ্রস্ত মামুন মিয়া জানান, আমার বাপদাদার বসবাস ছিল এই বসতভিটায় তার ধারাবাহিকতায় আমি আমার বাবা ও মায়ের ছিল এই মাথা গোঁজা ঠাই। নোটিশবিহীন উচ্ছেদ অভিযান করা হয়। আজকে আমাদের পথে বসিয়ে দিল। আমাদের এখন রাস্তায় ঘুমাতে হবে। যাওয়ার কোন পথ নেই। আমার ফুফাতো ভাই নুরুল আমিন মামলা হামলাবাজ লোক। তিনি আমার মত অনেক মানুষকে পথে বসিয়েছে। তিনি টাকার প্রভাবে মানুষকে মানুষ মনে করে না।
আমার বাড়ির পেছনের ১০৫৫ খতিয়ানের জায়গাটি তার ক্রয়কৃত জমি। সেই ৫ বছর যাবত দাবি করে আসছিলেন ৮১৭ খতিয়ানে দাগ নং ৩৩৫, ৩৩৪, ৩৩৩। অথচ তার ক্রয়কৃত জায়গার দাগ নং ১০৫৫ খতিয়ানের ৩২৯,৩৩০,৩৩৩। ৮১৭ খতিয়ানের দাগ নং ৩৩৪, ৩৩৫ আমাদের বসতভিটার জায়গা। কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতে আমার বসতভিটা দখলে নেওয়ার জন্য ভূয়া উচ্ছেদ মামলা করেন। পরে তদন্ত দেন রামুর এসিল্যান্ডের কাছে। তিনি সরজমিনে না এসে মনগড়া রিপোর্ট দেন আদালতে। আজকে এসিল্যান্ড স্যারকে আমার খতিয়ান দেখাতে চাইলাম কিন্তু তিনি আমাকে মিনিট ও সময় দেননি উলটো আমি আমাকে ধমক দিয়ে আমার বাড়ির স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। তারপর আমার মাথা গোঁজার ঠাঁইও হারালাম। আমি উচ্চ আদালতে আপিল করব। আমি এই নেক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এই বিষয়ে মামুনের বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমার জন্ম স্থান এটি। এতদিন তিনি কেন আইনী পদক্ষেপ নেননি। নুরুল আমিনের উচ্ছেদ মামলার নোটিশ আমরা পাইনি। এই ঘটনার আমি সবার কাছে সঠিক বিচার চাই। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন নামে এক ব্যাক্তি জানান, মামুন মিয়ার পরিবার এই বসতভিটায় আমার জন্মের আগে থেকে বসবাস করে আসছেন। আমার বয়স প্রায় ৫০ ছুঁইছুঁই। আজকে হঠাৎ দেখি তার বাড়িটি উচ্ছেদ করেছেন।
বয়োবৃদ্ধ একজন লোক বলেন, ”ইয়ান মামুন মিয়ার বাপ শফিউল করিমের জায়গা। অ্যাই ১৯৬৬ সাল লতি দেখির তারা ইয়ানত বসবাস গরের” মামুন মিয়ার ভগ্নিপতি নুরুল আলম জানান, আমার শশুর-শাশুড়ী ৬০ বছরের উপরে এই জায়গায় বসবাস করে আসছেন। অন্য এসে হঠাৎ জায়গা দাবি করা অযৌক্তিক। স্থানীয় জনসাধারণ এই নেক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মামুন মিয়াসহ তার ভাইবোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দ্রুত পুর্নবাসনের দাবি জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভুট্টাে জানান, মামুন মিয়ার জায়গার দলিল আমার দাদার নামে। আমার দাদার আমল থেকে আমরা জমির খাজনা দিয়ে আসছি। কিন্ত আমার দাদা মামুন মিয়ার নামে জায়গা রেজিস্ট্রি দেননি। মামুন মিয়া এই জায়গাতে ৬০ বছর যাবত বসবাস করে আসছেন। অথচ নুরুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তার জায়গা দাবি করে কোর্টে উচ্ছেদ মামলা করেন। কিন্তু কোন নোটিশ মামুন মিয়া বা আমি পায়নি। তিনি নোটিশ গোপন রেখে নিজের নামে ডিগ্রি নিয়ে এসিল্যান্ডের মাধ্যমে বসতভিটার স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। নুরুল আমিন একজন খারাপ লোক প্রকৃতির লোক। রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)নিরুপম মজুমদার এই বিষয়ে বলেন, আমি ঈদগড়ের হাসনাকাটায় বিজ্ঞ আদালতের উচ্ছেদ মামলার আদেশে মামুন মিয়ার বাড়ি উচ্ছেদ করেছি।